

উখিয়া উপজেলা ও উখিয়া সীমান্ত লাগোয়া নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অবৈধ এক ডজনের বেশি ইটভাটা এখনো চলছে পুরোদমে । আইন লঙ্ঘন করে ফসলি জমি, লোকালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে উঠেছে ভাটাগুলো। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর অবৈধ এসব ভাটা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বছরে একবার অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হলেও স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়না এসব ভাটা। অথচ আদালতের নির্দেশনা ছিল অবৈধ ইটভাটাগুলো ভেঙে ফেলার। কয়েকটি ভাটা গুড়িয়ে দেওয়া হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জরিমানা আদায়েই সীমাবদ্ধ রাখা হয় ভাটা গুলো। ফলে অভিযানের পর ভাটাগুলো কয়েকদিন বন্ধ রাখার পর পুনরায় চালু হয়ে যায়। কয়েকজন ইটভাটা মালিকের দাবি অভিযানের পর বনবিভাগ ‘ম্যানেজ’ করে অল্প অল্প কাজ করছেন তারা।
জানা যায়, চলতি মৌসুমে গত বছরের নভেম্বর মাসে ভাটাগুলো চালু হলেও প্রায় সাড়ে তিন মাস পর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেন উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যারীন তাসনিম তাসিন। এ সময় তিনি উপজেলার হলদিয়াপালং ও রত্নাপালং ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইনের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘনের দায়ে এমআরসি ব্রিকসের মালিককে ৭০ হাজার এবং আফিপা ব্রিকসের মালিককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন৷ একইদিন হলদিয়াপালং ও রত্নাপালং ইউনিয়নের অপর ২টি ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হোসেন চৌধুরী। তিনিও ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইনের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘনের দায়ে এবিপি ব্রিকসের মালিক আবদুল গফুর ও গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীকে ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং রত্নাপালং ইউনিয়নের ভালুকিয়া এলাকার এইচকেবি ব্রিকসের মালিককে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করেন। এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকায় অবস্থিত ইট ভাটায় সরকারি নির্দেশ লংঘন করে কার্যক্রাম চালানোর দায়ে ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন,‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপনের বিভিন্ন আইন লঙ্ঘনের দায়ে তিনটি ইটভাটার মালিককে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং অবৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটা ও সংশ্লিষ্ট কাজে বিরত থাকতে ইটভাটা মালিকদের সর্তক করেন তিনি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছরই এসব অবৈধ ইটভাটায় ২ থেকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বছরের পর বছর পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের দায়সারা এসব অভিযানের পরও দিব্যি ইটভাটাগুলো চলছে। ইটভাটার বিরূপ প্রভাব পড়ছে ফসলের মাঠে। আবার পর্যায়ক্রমে কৃষি জমিগুলোও বিভিন্ন কৌশলে ইটভাটাগুলোর অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তারা অবৈধ এসব ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি জানান ।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন,অবৈধ ভাটা উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন তারা। তবে এসব ভাটা বন্ধে জেলা প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে। সকল প্রকার আইন মেনে পরিবেশ বান্ধব ভাটা তৈরি করলে অবশ্যায় তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, পাহাড় ধ্বংস করে কোন ইটভাটা চালু করতে দেয়া যাবে না। আমরা চেষ্টা করছি জিরো টলারেন্স নিয়ে আসার জন্য।
পাঠকের মতামত